হাশরের ময়দানে কি পৃথিবীর আকৃতি নিয়ে কোনো প্রশ্ন হবে?
আমরা যখনই সমতলে বিছানো পৃথিবী নিয়ে কোনো পোস্ট দেই। তখনই কিছু ভাই একটা কমন প্রশ্ন করেন। "এসব ব্যাপারে কি হাশরের ময়দানে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করা হবে"? এই ভাই গুলো অন্য জায়গায় বা গ্ৰুপে গিয়ে হাবিজাবি পোস্টের বিরুদ্ধে কখনো এমন প্রশ্ন করে বলে মনে হয়না। তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই আমাদেরকে অনুৎসাহিত করার জন্য এসব প্রশ্ন করে। তাদের কথা অনুযায়ী, যদি হাশরের প্রশ্নের দিকে তাকিয়ে কেউ তাদের আলোচনাকে সীমাবদ্ধই করতে চায়, তাহলে আপাত দৃষ্টিতে টপিক্স অনেক সংকীর্ণ হয়ে যায়।
শেষ বিচারের মাঠে আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রতিটি বান্দাকে ৫টি প্রশ্ন করবেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল সা. ইরশাদ করেন, সেই দিন ৫টি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কোনো আদম সন্তান তার পা এক কদমও নাড়াতে পারবে না; চাই সে নবী হোক কিংবা অলী হোক। সেই ৫ প্রশ্ন হলো নিম্নরূপ।
(১) সর্ব প্রথম তাকে প্রশ্ন করা হবে, ‘তুমি তোমার সারা জীবন কোন পথে কাটিয়েছো?’
(২) এরপর প্রশ্ন করা হবে, ‘যৌবনকালে কোন আমল করেছো?’ এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেহেতু যৌবনে মানুষ সবচে’ বেশি কাজ করতে পারে, তার শক্তিও থাকে অফুরান, তাই বিশেষভাবে এ সময়ের হিসাব চাইবেন আল্লাহ তায়ালা।
(৩) তৃতীয় ও চতুর্থ প্রশ্ন হবে, ‘ধন-সম্পদ কোন পথে উপার্জন করেছো?’
(৪) চতুর্থ প্রশ্ন, ‘কোন পথে ধন সম্পদ ব্যয় করেছো?’
(৫) পঞ্চম প্রশ্ন, ‘দীন ইসলাম সম্পর্কে যতোটুকু জেনেছো, সে অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছো। (তিরমিযি)
সুতরাং এর বাহিরে কারোরই আর আলোচনা করা উচিত নয়।
অথচ দেখুন আমাদের আলোচ্য বিষয়কে আমরা প্রথম প্রশ্নের আওতায় ফেলতে পারি। আমরা প্রথম প্রশ্নের উত্তরে বলতে পারবো। "আল্লাহ, আমরা আপনার সৃষ্টির গবেষণার (এলম অর্জন) পিছনে সারাজীবন কাটিয়েছি "।
আল্লাহ বলেন:
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لآيَاتٍ لِّأُوْلِي الألْبَابِ
নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধ সম্পন্ন লোকদের জন্যে। [ সুরা ইমরান ৩:১৯০ ]
الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىَ جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذا بَاطِلاً سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষযে, (তারা বলে) পরওয়ারদেগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদিগকে তুমি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচাও। [ সুরা ইমরান ৩:১৯১ ]
তিনি আরো বলেন
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَالْفُلْكِ الَّتِي تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِمَا يَنفَعُ النَّاسَ নিশ্চয়ই আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে এবং নদীতে নৌকাসমূহের চলাচলে মানুষের জন্য কল্যাণ রয়েছে।[ সুরা বাকারা ২:১৬৪ ]
তিনি আরো বলেন
وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا لَاعِبِينَ
আমি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। [ সুরা দুখান ৪৪:৩৮ ]
مَا خَلَقْنَاهُمَا إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ
আমি এগুলো যথাযথ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি; কিন্তু তাদের অধিকাংশই বোঝে না। [ সুরা দুখান ৪৪:৩৯ ]
তিনি আরো বলেন
إِنَّ الَّذِينَ يُجَادِلُونَ فِي آيَاتِ اللَّهِ بِغَيْرِ سُلْطَانٍ أَتَاهُمْ إِن فِي صُدُورِهِمْ إِلَّا كِبْرٌ مَّا هُم بِبَالِغِيهِ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ
নিশ্চয় যারা আল্লাহর আয়াত সম্পর্কে বিতর্ক করে তাদের কাছে আগত কোন দলীল ব্যতিরেকে, তাদের অন্তরে আছে কেবল আত্নম্ভরিতা, যা অর্জনে তারা সফল হবে না। অতএব, আপনি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় তিনি সবকিছু শুনেন, সবকিছু দেখেন। [ সুরা মু’মিন ৪০:৫৬ ]
لَخَلْقُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ أَكْبَرُ مِنْ خَلْقِ النَّاسِ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
মানুষের সৃষ্টি অপেক্ষা নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলের সৃষ্টি কঠিনতর। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বোঝে না। [ সুরা মু’মিন ৪০:৫৭ ]
পরিশেষে
سُنَّةَ اللَّهِ فِي الَّذِينَ خَلَوْا مِن قَبْلُ وَلَن تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلًا
যারা পূর্বে অতীত হয়ে গেছে, তাদের ব্যাপারে এটাই ছিল আল্লাহর রীতি। আপনি আল্লাহর রীতিতে কখনও পরিবর্তন পাবেন না। [ সুরা আহযাব ৩৩:৬২ ]
আশা করি উত্তর পেয়েছেন।
Comments
Post a Comment