ঈসা (আ) কি জীবিত, নাকি মৃত? ফিরে আসবেন, নাকি আসবেন না? সংশয় নিরসন:

আমরা সবাই খুব ভালো করে জানি যে, ইহুদিরা যখন ঈসাকে () হত্যা করতে এসেছিলো তখন আল্লাহ তায়ালা ঈসাকে () নিজের কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন

এবং শেষ জমানায় আল্লাহ উনাকে আবার দুনিয়াতে পাঠাবেন, দাজ্জালকে হত্যা ইহুদি খ্রিস্টানদেরকে উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য কিন্তু একদল মানুষ এটা নিয়ে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে তারা এই বিষয়টা নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, এখনো ছড়াচ্ছে এর মধ্যে অন্যতম দুটি দল হলো কাদিয়ানী আহলে কুরআন সম্প্রদায় এই ভ্রান্ত পথভ্রষ্ট দল দুটির ফাঁদে পা দিয়ে অনেক সাধারণ মুসলিমও বিভ্রান্ত হচ্ছে ইদানিং আবার সাবেক এক নাস্তিক, যে কিনা হঠাৎ করে আবার ইসলামে ফিরে আসার ঘোষণা (নাটক মনে হচ্ছে) দিয়েছে সে এগুলো নিয়ে খুব বিভ্রান্তি ছড়িয়ে যাচ্ছে সে হাদিসের সাথে কোরআনকে না মিলাতে পেরে নাস্তিক হয়েছে বলে শুনেছিলাম এখন সে আহলে কোরআন (হাদিস বাদ দিয়ে শুধু কোরআনের অনুসারী) হয়ে ফিরে এসে বিভ্রান্তিকর কথা বার্তা প্রচার করছে

 

কিছু মুসলিম ভাইকেও এই ফাঁদে পা দিতে দেখেছি হাদিস কখনোই কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক হয়না জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা সমন্বয়ের যোগ্যতা না থাকায় এমনটা মনে হয় ফলে হাদীসকে সাংঘর্ষিক মনে হয় এবং শেষ মেশ হাদীসকেই বাদ দিতে চায়, নাউযুবিল্লাহ ইদানিং, ছোয়াচে রোগের মতো এই মানসিক রোগটাকে অনেকের মধ্যেই সংক্রমিত হতে দেখছি

তাই, আজকে এই আর্টিকেলের দ্বারা উম্মতকে, এই রোগ থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ প্রথমেই আমরা এই সংক্রান্ত আয়াত গুলো দেখে নিবো সূরা নিসার ১৫৭, ১৫৮ ১৫৯ আয়াতের অনেকগুলো অনুবাদ এবং কিছু তাফসীর দিয়ে বিষয়টাকে স্পষ্ট করবো ইনশাআল্লাহ   

  

 

 

 

 

 

৪:১৫৭ وَّ قَوۡلِهِمۡ اِنَّا قَتَلۡنَا الۡمَسِیۡحَ عِیۡسَی ابۡنَ مَرۡیَمَ رَسُوۡلَ اللّٰهِ ۚ وَ مَا قَتَلُوۡهُ وَ مَا صَلَبُوۡهُ وَ لٰکِنۡ شُبِّهَ لَهُمۡ ؕ وَ اِنَّ الَّذِیۡنَ اخۡتَلَفُوۡا فِیۡهِ لَفِیۡ شَکٍّ مِّنۡهُ ؕ مَا لَهُمۡ بِهٖ مِنۡ عِلۡمٍ اِلَّا اتِّبَاعَ الظَّنِّ ۚ وَ مَا قَتَلُوۡهُ یَقِیۡنًۢا ﴿۱۵۷﴾ۙ

এবং তাদের এ কথার কারণে যে, ‘আমরা আল্লাহর রাসূল মারইয়াম পুত্র ঈসা মাসীহকে হত্যা করেছি’। অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি এবং তাকে শূলেও চড়ায়নি। বরং তাদেরকে ধাঁধায় ফেলা হয়েছিল। আর নিশ্চয় যারা তাতে মতবিরোধ করেছিল, অবশ্যই তারা তার ব্যাপারে সন্দেহের মধ্যে ছিল। ধারণার অনুসরণ ছাড়া এ ব্যাপারে তাদের কোন জ্ঞান নেই। আর এটা নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করেনি। (আল-বায়ান)

আর ‘আমরা আল্লাহর রসূল মাসীহ ঈসা ইবনু মারইয়ামকে হত্যা করেছি’ তাদের এ উক্তির জন্য। কিন্তু তারা না তাকে হত্যা করেছে, না তাকে ক্রুশবিদ্ধ করেছে, কেবলমাত্র তাদের জন্য (এক লোককে) তার সদৃশ করা হয়েছিল, আর যারা এ বিষয়ে মতভেদ করেছিল তারাও এ সম্পর্কে সন্দেহে পতিত হয়েছিল। শুধু অমূলক ধারণার অনুসরণ ছাড়া এ ব্যাপারে তাদের কোন জ্ঞানই ছিল না। এটা নিশ্চিত সত্য যে, তারা তাকে হত্যা করেনি। (তাইসিরুল)

এবং ‘‘আল্লাহর রাসূল ও মারইয়াম নন্দন ঈসাকে আমরা হত্যা করেছি’’ বলার জন্য। অথচ তারা না তাকে হত্যা করেছে আর না শুলে চড়িয়েছে; বরং তারা ধাঁধাঁয় পতিত হয়েছিল। তারা তদ্বিষয়ে সন্দেহাচ্ছন্ন ছিল, কল্পনার অনুসরণ ব্যতীত এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান ছিলনা। প্রকৃত পক্ষে তারা তাকে হত্যা করেনি। (মুজিবুর রহমান)

And [for] their saying, "Indeed, we have killed the Messiah, Jesus, the son of Mary, the messenger of Allah." And they did not kill him, nor did they crucify him; but [another] was made to resemble him to them. And indeed, those who differ over it are in doubt about it. They have no knowledge of it except the following of assumption. And they did not kill him, for certain. (Sahih International)

এতক্ষন সূরা নিসার ১৫৭ নং আয়াতের কয়েকটি অনুবাদ দেখলেন। এবার কয়েকটি সংক্ষিপ্ত তাফসীর দেখুন।

১৫৭. আর আমরা আল্লাহর রাসূল মারইয়াম তনয় ‘ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি’ তাদের এ উক্তির জন্য। অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি এবং ক্রুশবিদ্ধও করেনি; বরং তাদের জন্য (এক লোককে) তার সদৃশ করা হয়েছিল।(১) আর নিশ্চয় যারা তার সম্বন্ধে মতভেদ করেছিল, তারা অবশ্যই এ সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত ছিল; এ সম্পর্কে অনুমানের অনুসরণ ছাড়া তাদের কোন জ্ঞানই ছিল না। আর এটা নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করেনি,

(১) এখানে স্পষ্ট ঘোষণা করা হয়েছে যে, ওরা ঈসা আলাইহিস সালাম-কে হত্যাও করতে পারেনি, শুলেও চড়াতে পারেনি, বরং আসলে ওরা সন্দেহে পতিত হয়েছিল। কিন্তু তাদের সন্দেহ কি ছিল এ ব্যাপারে বিভিন্ন বর্ণনা এসেছে, সব বর্ণনার সার কথা হচ্ছে, ইয়াহুদীরা যখন ঈসা আলাইহিস সালাম-কে হত্যা করতে বদ্ধপরিকর হলো, তখন তার ভক্ত-সহচরবৃন্দ এক স্থানে সমবেত হলেন। ঈসা আলাইহিস সালামও সেখানে উপস্থিত হলেন। তখন চার হাজার ইয়াহুদী দূরাচার একযোগে গৃহ অবরোধ করলো। তখন ঈসা আলাইহিস সালাম স্বীয় ভক্ত অনুচরগণকে সম্বোধন করে বললেন, তোমাদের মধ্য থেকে কেউ এই ঘর থেকে বের হতে ও নিহত হতে এবং আখেরাতে জান্নাতে আমার সাথী হতে প্রস্তুত আছো কি? জনৈক ভক্ত আত্মোৎসর্গের জন্য উঠে দাঁড়ালেন। ঈসা আলাইহিস সালাম নিজের জামা ও পাগড়ী তাকে পরিধান করালেন। অতঃপর তাকে ঈসা আলাইহিস সালাম-এর সাদৃশ করে দেয়া হলো। যখন তিনি ঘর থেকে বের হলেন, তখন ইয়াহুদীরা ঈসা আলাইহিস সালাম মনে করে তাকে বন্দী করে নিয়ে গেল এবং শুলে চড়িয়ে হত্যা করলো। অপরদিকে ঈসা আলাইহিস সালাম-কে আল্লাহ্ তা'আলা আসমানে তুলে নিলেন।

অন্য এক বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, ইয়াহুদীরা এক লোককে ঈসা আলাইহিস সালাম-কে হত্যা করার জন্য পাঠিয়েছিল। কিন্তু ইতোপূর্বে আল্লাহ্ তা'আলা তাকে আকাশে তুলে নেয়ায় সে তার নাগাল পেল না। বরং ইতিমধ্যে তার নিজের চেহারা ঈসা আলাইহিস সালাম-এর মত হয়ে গেল। ব্যর্থ মনোরথ হয়ে সে যখন ঘর থেকে বেরিয়ে এল তখন অন্যান্য ইয়াহুদীরা তাকেই ঈসা আলাইহিস সালাম মনে করে পাকড়াও করলো, এবং শুলে বিদ্ধ করে হত্যা করলো। উক্ত বর্ণনা দুটির মধ্যে যে কোনটিই সত্য হতে পারে। কুরআনুল কারীম এ সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু ব্যক্ত করেনি। অতএব, প্রকৃত ঘটনার সঠিক খবর একমাত্র আল্লাহ্ তা'আলাই জানেন। অবশ্য কুরআনুল কারীমের আয়াত ও তাফসীর সংক্রান্ত বর্ণনার সমন্বয়ে সিদ্ধান্ত করা যায় যে, প্রকৃত ঘটনা ইয়াহুদী-খৃষ্টানদেরও অজ্ঞাত ছিল। তারা চরম বিভ্রান্তির আবর্তে নিক্ষিপ্ত হয়ে শুধু অনুমান করে বিভিন্ন উক্তি ও দাবী করছিল।

ফলে উপস্থিত লোকদের মধ্যেই চরম মতভেদ ও বিবাদের সৃষ্টি হয়েছিল। তাই কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে যে, যারা ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে নানা মত পোষন করে নিশ্চয় এ ব্যাপারে তারা সন্দেহে পতিত হয়েছে। তাদের কাছে এ সম্পর্কে কোন সত্যনির্ভর জ্ঞান নেই। তারা শুধু অনুমান করে কথা বলে। আর তারা যে ঈসা আলাইহিস সালাম-কে হত্যা করেনি, এ কথা সুনিশ্চিত। বরং আল্লাহ্ তা'আলা তাকে নিরাপদে নিজের কাছে তুলে নিয়েছেন। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, সম্বিত ফিরে পাওয়ার পর কিছু লোক বললো, আমরা তো নিজেদের লোককেই হত্যা করে ফেলেছি। কেননা, নিহত ব্যক্তির মুখমণ্ডল ঈসা 'আলাইহিস সালাম-এর মত হলেও তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অন্য রকম। তদুপরি এ ব্যক্তি যদি ঈসা আলাইহিস সালাম হয়, তবে আমাদের প্রেরিত লোকটি গেল কোথায়? আর এ ব্যক্তি আমাদের হলে ঈসা আলাইহিস সালামই বা কোথায় গেলেন? মোটকথা: ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে ইয়াহুদী ও নাসারা যারাই কথা বলে তারাই বিভ্রান্তিতে লিপ্ত। তাদের কাছে এ ব্যাপারে কোন জ্ঞান নেই।

(তাফসীরে জাকারিয়া)

(১৫৭) আর ‘আমরা আল্লাহর রসূল মারয়্যাম-পুত্র ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি’ তাদের এ উক্তির জন্য (অভিশপ্ত হয়েছিল)। অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি এবং ক্রুসবিদ্ধও করেনি,[1] বরং তাদের জন্য (অন্য একজনকে ঈসার) আকৃতি দান করা হয়েছিল।[2] নিঃসন্দেহে যারা তার সম্বন্ধে মতভেদ করেছিল, বস্তুতঃ তারা এ সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত ছিল এবং অনুমানের অনুসরণ ছাড়া এ সম্পর্কে তাদের কোন জ্ঞানই ছিল না।[3] আর এ নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করেনি।

[1] এই আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইয়াহুদীরা ঈসা (আঃ)-কে হত্যা করতে বা শূলে চড়াতে (ক্রুসবিদ্ধ করতে) কোনটিতেই সফল হয়নি যেমনটি তাঁদের উদ্দেশ্য, পরিকল্পনা ও অভিপ্রায় ছিল। এ প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা সূরা আলে-ইমরানের ৫৫নং আয়াতের টীকায় বর্ণনা করা হয়েছে।

[2] এর ব্যাখ্যা হলো, যখন ঈসা (আঃ) ইয়াহুদীদের হত্যা করার চক্রান্তের কথা জানতে পারলেন, তখন তাঁর ভক্ত ও সহচরবৃন্দকে এক স্থানে সমবেত করলেন, যাদের সংখ্যা ১২ অথবা ১৭ ছিল। এবং তাঁদেরকে বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আমার স্থানে নিহত হুতে প্রস্তুত আছ? যাকে আল্লাহ তা'আলা আমার মত আকার-আকৃতি দান করবেন। তাঁদের মধ্যে একজন যুবক প্রস্তুত হয়ে গেলেন। সুতরাং ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর নির্দেশে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হল। এরপর ইয়াহুদীরা এসে ঐ যুবককে নিয়ে গেল এবং ক্রুসবিদ্ধ করল, যাঁকে মহান আল্লাহ ঈসা (আঃ)-এর মত আকৃতি দান করেছিলেন। আর ইয়াহুদীদের ধারণা হল যে, তারা ঈসাকেই ক্রুসবিদ্ধ করতে কৃতকার্য ও সক্ষম হয়েছে। অথচ তিনি ঐ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না; বরং তাঁকে জীবিত অবস্থায় সশরীরে নিরাপদে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর, ইবনে কাসীর)

[3] ঈসা (আঃ)-এর মত আকৃতিবিশিষ্ট লোকটিকে হত্যা করার পর ইয়াহুদীদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়; একদল বলে, ঈসাকে হত্যা করা হয়েছে। অন্য একদল বলে, ক্রুসবিদ্ধ ব্যক্তি ঈসা নয়; বরং অন্য কোন ব্যক্তি। এরা ঈসা (আঃ)-কে হত্যা ও ক্রুসবিদ্ধ করার কথা অস্বীকার করে। আবার অন্য একদল বলে, তারা ঈসা (আঃ)-কে আসমানে চড়তে স্বচক্ষে দেখেছে। কিছু মুফাসসির বলেন, উক্ত মতভেদ থেকে উদ্দেশ্য হল, স্বয়ং নাসারাদের নাস্তরিয়া নামক একটি ফির্কা বলে যে, ঈসা (আঃ)-কে তাঁর মানবিক দেহ হিসাবে ক্রুসবিদ্ধ করা হয়েছে; কিন্তু ঈশ্বর হিসাবে নয়। আবার মালকানিয়া নামক একটি ফির্কা বলে, মানবিক ও ঐশ্বরিক উভয়ভাবেই তাঁকে হত্যা ও ক্রুসবিদ্ধ করা হয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর) যাই হোক তারা মতবিরোধ, সংশয় ও সন্দেহের শিকার।

(তাফসীরে আহসানুল বায়ান)

 

উপরে আমরা আয়তের অনুবাদ ও তাফসীর থেকে স্পষ্ট জানতে পারলাম যে, আল্লাহ তায়ালা ঈসা (আ) কে সশরীরে আসমানে উঠিয়ে নিয়ে গেছেন এবং তিনি আবার ফিরে আসবেন। এ ব্যাপারে সমস্ত ওলামায়ে কেরাম একমত।

আর পরবর্তী আয়াতে তো আল্লাহ তায়ালা একদম স্পষ্ট করে এ কথা বলে দিয়েছেন।

এবার ১৫৮ নং আয়াতের কিছু অনুবাদ ও তাফসীর দেখুন।

অনুবাদ:

 

৪:১৫৮ بَلۡ رَّفَعَهُ اللّٰهُ اِلَیۡهِ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ عَزِیۡزًا حَکِیۡمًا ﴿۱۵۸

বরং আল্লাহ তাঁর কাছে তাকে তুলে নিয়েছেন এবং আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান

বরং আল্লাহ তাকে নিজের কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন, আর আল্লাহ হলেন মহাপরাক্রমশালী, মহাবিজ্ঞানী। (তাইসিরুল)

পরন্ত আল্লাহ তাকে নিজের দিকে উঠিয়ে নিয়েছেন, এবং আল্লাহ পরাক্রান্ত মহাজ্ঞানী। (মুজিবুর রহমান)

Rather, Allah raised him to Himself. And ever is Allah Exalted in Might and Wise. (Sahih International)

তাফসীর:

১৫৮. বরং আল্লাহ তাকে তার নিকট তুলে নিয়েছেন এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।(১)

(১) “আল্লাহ অতি পরাক্রমশালী, হিকমতওয়ালা (প্রজ্ঞাময়)।” ইয়াহুদীরা ঈসা আলাইহিস্ সালাম-কে হত্যা করার যত ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তই করুক না কেন, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তা'আলা যখন তার হেফাযতের নিশ্চয়তা দিয়েছেন তখন তার অসীম কুদরত ও অপার হেকমতের সামনে ওদের অপচেষ্টার কি মূল্য আছে? আল্লাহ্ তা'আলা প্রজ্ঞাময়, তার প্রতিটি কাজে নিগৃঢ় রহস্য বিদ্যমান রয়েছে। জড়পূজারী বস্তুবাদীরা যদি ঈসা 'আলাইহিস সালাম-কে সশরীরে আকাশে উত্তোলনের সত্যটি উপলব্ধি করতে না পারে, তবে তা তাদেরই দুর্বলতার প্রমাণ।

(তাফসীরে জাকারিয়া)

(১৫৮) বরং আল্লাহ তাকে তাঁর নিকট তুলে নিয়েছেন[1] এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।[2]

[1] এই আয়াত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তাআলা নিজের অলৌকিক শক্তি দ্বারা ঈসা (আঃ)-কে জীবিত অবস্থায় সশরীরে আসমানে তুলে নিয়েছেন। বহুধা সূত্রে বর্ণিত হাদীসেও এ কথা প্রমাণিত আছে। এ সকল হাদীস হাদীসের সমস্ত গ্রন্থ ছাড়াও বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। সে সব হাদীসে ঈসা (আঃ)-কে আসমানে তুলে নেওয়া ছাড়াও পুনরায় প্রলয় দিবসের প্রাক্কালে পৃথিবীতে তাঁর অবতরণ এবং আরো বহু কথা তাঁর ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়েছে। ইমাম ইবনে কাসীর (রহঃ) এই সমস্ত হাদীসগুলিকে বর্ণনা করার পর শেষে লিখেছেন যে, উল্লিখিত হাদীসগুলি রসূল (সাঃ) হতে বহুধা সূত্রে প্রমাণিত। এই হাদীসগুলির বর্ণনাকারীগণ হলেনঃ আবু হুরাইরাহ, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, উসমান বিন আবুল আ’স, আবু উমামা, নাওয়াস বিন সামআন, আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আ’স, মুজাম্মে’ বিন জারিয়াহ, আবূ সারীহাহ এবং হুযাইফা বিন উসায়েদ (রাঃ) প্রমুখ সাহাবাবৃন্দ। এই সমস্ত হাদীসে তিনি কোথায় ও কিভাবে অবতরণ করবেন তা উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি দিমাশকের মিনারা শারক্বিয়াতে ফজরের নামাজের ইকামতের সময় অবতরণ করবেন। তিনি শূকর হত্যা করবেন, ক্রুস ভেঙ্গে ফেলবেন ও জিযিয়া কর বাতিল করে দিবেন। তাঁর শাসনামলে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ মুসলমান হয়ে যাবে। তিনিই দাজ্জালকে হত্যা করবেন, তাঁর যুগেই ইয়াজুজ ও মাজুজ ও তাদের ফিতনা-ফাসাদের প্রকাশ ঘটবে এবং তাঁর বদ্দুআতে তারা বিনাশ ও ধ্বংস হয়ে যাবে।

[2] অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা মহাপরাক্রমশালী ও বিজয়ী, তাঁর ইচ্ছাকে কেউ রদ্দ করতে পারে না। যে তাঁর আশ্রয়ে চলে আসবে, তার বিরুদ্ধে যে যতই ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করুক না কেন, তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তিনি হচ্ছেন মহাপ্রজ্ঞাময়, তাঁর প্রতিটি কাজের ভিতরে হিকমত, যুক্তি ও নিগূঢ় রহস্য বিদ্যমান রয়েছে।

(তাফসীরে আহসানুল বায়ান)

এবার তো আর কোনো কথাই থাকলো না। তারপরেও পথভ্রষ্ট লোকেরা এখানে আপত্তি তুলে বলে: "উঠিয়ে নেয়া মানে, মৃত্যু দিয়ে উঠিয়ে নিয়েছেন"। অর্থাৎ তারা বলতে চায়, ঈসা (আ) কে সশরীরে (জীবিত) উঠিয়ে নেয়া হয়নি, বরং মৃত্যু দিয়ে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। ইলমের গভীরতা না থাকলে যা হয় আরকি। আর এই বিষয়টা নিয়েই তারা সবচেয়ে বেশি অপপ্রচার চালাচ্ছে। অথচ যে কেউ এই দুই আয়াতের শুধু অনুবাদ পড়লেই বিষয়টি পরিষ্কার বুঝতে পারবে। তাফসীর আর হাদিসের কথা তো বাদই দিলাম।

এই পথভ্রষ্ট লোকগুলো কোরআনও ঠিকমতো অধ্যায়ন করেন। কারণ এর পরের আয়াতেই ঈসা (আ) এর ফিরে আসার স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়া আছে। কিন্তু সেটা তাদের চোখে পরে না। বা ধরতে পারে না। বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে এড়িয়ে যায়।

এবার চলুন ১৫৯ আয়াতটি দেখি।

অনুবাদ:

 

 

৪:১৫৯ وَ اِنۡ مِّنۡ اَهۡلِ الۡکِتٰبِ اِلَّا لَیُؤۡمِنَنَّ بِهٖ قَبۡلَ مَوۡتِهٖ ۚ وَ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ یَکُوۡنُ عَلَیۡهِمۡ شَهِیۡدًا ﴿۱۵۹﴾ۚ

কিতাবীদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে তার মৃত্যুর পূর্বে তার প্রতি ঈমান আনবে না* এবং কিয়ামতের দিনে সে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হবে। আল-বায়ান

কিতাবওয়ালাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে, তার মৃত্যুর পূর্বে তার প্রতি অবশ্যই ঈমান আনবে না, আর ক্বিয়ামাতের দিন সে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। (তাইসিরুল)

এবং আহলে কিতাবের মধ্যে এমন কেহ নেই যে, তার মৃত্যুর পূর্বে ব্যতীত এটা বিশ্বাস করবে; এবং উত্থান দিনে সে (ঈসা) তাদের উপর সাক্ষ্য দান করবে। (মুজিবুর রহমান)

And there is none from the People of the Scripture but that he will surely believe in Jesus before his death. And on the Day of Resurrection he will be against them a witness. (Sahih International)

* কিয়ামতের পূর্বে ঈসা আঃ যখন অবতরণ করবেন, তখন সে যুগের ইয়াহূদী ও নাসারারা পুরো বিষয়টি উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে এবং সকলেই মৃত্যুর মুহূর্তে তাঁর প্রতি ঈমান আনবে; কিন্তু ফির‘আউনের মত তাদের ঈমান তখন কোন কাজে আসবে না।

তাফসীর:

১৫৯. কিতাবীদের মধ্য থেকে প্রত্যেকে তার মৃত্যুর পূর্বে (১) তার উপর ঈমান আনবেই। আর কেয়ামতের দিন তিনি তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হবেন।(২)

(১) অর্থাৎ ইয়াহুদীরা ঈর্ষা, বিদ্বেষ ও শক্রতার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে যদিও নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে চিন্তা করে না এবং ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে, এমনকি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তকেও অস্বীকার করে, কিন্তু তাদের মৃত্যুর পূর্বে এমন এক সময় আসবে, যখন তাদের দৃষ্টির সম্মুখে সত্য উন্মোচিত হবে, তখন তারা যথার্থই বুঝতে পারবে যে, ঈসা আলাইহিস সালাম ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে তাদের ধারণা একান্তই ভ্রান্তিপূর্ণ ছিল। এ আয়াতের موته অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্বে শব্দে ইয়াহুদীদের মৃত্যুর দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এমতাবস্থায় অত্র আয়াতের তাফসীর এই যে, প্রত্যেক ইয়াহুদীই তার অন্তিম মুহুর্তে যখন আখেরাতের দৃশ্যাবলী অবলোকন করবে, তখন ঈসা 'আলাইহিস সালাম-এর নবুওয়তের সত্যতা ও নিজেদের বাতুলতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে এবং তার প্রতি ঈমান আনয়ন করতে বাধ্য হবে। কিন্তু তখনকার ঈমান তাদের আদৌ কোন উপকারে আসবে না; যেমন লোহিত সাগরে ডুবে মরার সময় ফির'আওনের ঈমান ফলপ্রসূ হয়নি। এ আয়াতের দ্বিতীয় তাফসীর যা সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের বিপুল জামা’আত কর্তৃক গৃহীত ও সহীহ হাদীস দ্বারা সমর্থিত হয়েছে, তা হলো موته ‘তার মৃত্যু’ শব্দের সর্বনামে ঈসা আলাইহিস সালাম-এর মৃত্যু বোঝানো হয়েছে। এমতাবস্থায় অত্র আয়াতের তাফসীর হলো, কিতাবীরা এখন যদিও ঈসা আলাইহিস সালাম-এর প্রতি সত্যিকার ঈমান আনে না, ইয়াহুদীরা তো তাকে নবী বলে স্বীকারই করে না, বরং ভণ্ড, মিথ্যাবাদী ইত্যকার আপত্তিকর বিশেষণে ভূষিত করে।

অপরদিকে নাসারারা যদিও ঈসা মসীহ আলাইহিস সালামকে ভক্তি ও মান্য করার দাবীদার; কিন্তু তাদের মধ্যে একদল ইয়াহুদীদের মতই ঈসা আলাইহিস সালাম-এর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার এবং মৃত্যুবরণ করার কথায় স্বীকৃতি প্রদান করে চরম মূর্খতার পরিচয় দিচ্ছে। তাদের আরেক দল অতিভক্তি দেখাতে গিয়ে ঈসা আলাইহিস সালাম-কে স্বয়ং আল্লাহ বা আল্লাহর পুত্র বলে ধারণা করে বসেছে। কুরআনুল কারীমের এই আয়াতে ভবিষ্যদ্বানী করা হয়েছে যে, ইয়াহুদী ও নাসারারা বর্তমানে যদিও ঈসা আলাইহিস সালাম-এর প্রতি যথাযথ ঈমান রাখে না, বরং শৈথিল্য বা বাড়াবাড়ি করে, কিন্তু কিয়ামতের নিকটবর্তী যুগে তিনি যখন পুনরায় পৃথিবীতে অবতরণ করবেন, তখন এরাও তার প্রতি পুরোপুরি ঈমান আনয়ন করবে। নাসারারা তখন মুসলিমদের মত সহীহ আকীদা ও বিশ্বাসের সাথে ঈমানদার হবে। ইয়াহুদীদের মধ্যে যারা তার বিরুদ্ধাচরণ করবে, তাদেরকে নিধন ও নিশ্চিহ্ন করা হবে, অবশিষ্টরা ইসলাম গ্রহণ করবে। তখন সমগ্র দুনিয়া থেকে সর্বপ্রকার কুফরী ধ্যান-ধারণা, আচার-অনুষ্ঠান উৎক্ষিপ্ত হয়ে যাবে; সর্বত্র ইসলামের একচ্ছত্র প্রাধান্য কায়েম হবে।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ঈসা ইবন মারইয়াম 'আলাইহিস সালাম একজন ন্যায়পরায়ণ শাসকরূপে অবশ্যই অবতরণ করবেন। তিনি দাজ্জালকে কতল করবেন, শুকর নিধন করবেন এবং ক্রুশকে চুরমার করবেন। তখন একমাত্র আল্লাহ্ তা'আলার ইবাদাত করা হবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু আরো বলেন - তোমরা ইচ্ছা করলে এখানে কুরআনুল কারীমের এ আয়াত পাঠ করতে পার যাতে বলা হয়েছেঃ “আহলে কিতাবদের মধ্যে কেউ অবশিষ্ট থাকবে না, বরং ওরা তার মৃত্যুর পূর্বে অবশ্যই তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে। [বুখারীঃ ৩৪৪৮] আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ এর অর্থ ঈসা আলাইহিস সালাম-এর মৃত্যুর পূর্বে। এ বাক্যটি তিনি তিনবার উচ্চারণ করেন। অন্য এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তখন তোমাদের কেমন লাগবে? যখন ঈসা 'আলাইহিস সালাম তোমাদের মাঝে আগমন করবেন এবং তোমাদের মধ্য থেকে ইমাম হবেন। [বুখারীঃ ৩৪৪৯] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ! অবশ্যই ইবন মারইয়াম ‘ফাজ্জ আর রাওহা’ থেকে হজ্জ বা উমরা অথবা উভয়টির জন্যই ইহরাম বাঁধবেন। [মুসলিম: ১২৫২]

অন্য হাদীসে এসেছে, ইবন মারইয়াম দাজ্জালকে বাবে লুদ এ হত্যা করবে। [তিরমিযী ২২৪৪] মোটকথা: কিয়ামতের পূর্বে ঈসা আলাইহিস সালামের আগমনের ব্যাপারটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। যখন তিনি আসবেন তখন সমস্ত বিভ্রান্ত নাসারা ঈসা আলাইহিস সালামের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সমর্থ হবে।

(২) কাতাদা বলেন, এর অর্থ তিনি সাক্ষ্য দিবেন যে, তিনি তাদের কাছে তার রবের রিসালত পৌছে দিয়েছেন এবং তিনি যে বান্দা এ কথার স্বীকৃতি প্রদান করবেন। [তাবারী]

(তাফসীরে জাকারিয়া)

(১৫৯) ঐশীগ্রন্থধারীদের প্রত্যেকেই তার মৃত্যুর পূর্বে তাকে (ঈসাকে) বিশ্বাস করবেই[1] এবং কিয়ামতের দিন সে (ঈসা) তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হবে। [2]

[1] আলোচ্য আয়াতে (قبل موته) এর মধ্যে هُ (তার) সর্বনামটি থেকে কিছু মুফাসসিরগণের মতে খ্রিষ্টানকে বুঝানো হয়েছে। এমতাবস্থায় আয়াতের ব্যাখ্যা এই যে, প্রত্যেক খ্রিষ্টানই নিজ অন্তিম মুহূর্তে ঈসা (আঃ)-এর নবুঅতের সত্যতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে এবং তাঁর প্রতি ঈমান আনবে। কিন্তু সেই মুহূর্তের ঈমান তাদের আদৌ কোন উপকারে আসবে না। দ্বিতীয় ব্যাখ্যা যা সালাফ ও বহু মুফাসসির কর্তৃক সমর্থিত, তা হলো موته (তার মৃত্যু) শব্দের সর্বনামে ঈসা (আঃ)-এর মৃত্যুর দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এমতাবস্থায় আয়াতের অর্থ হবে, যখন তিনি দ্বিতীয়বার দুনিয়াতে অবতরণ করবেন এবং দাজ্জালকে হত্যা করার পর, ইসলামের প্রচার ও প্রসার কাজে মগ্ন হবেন এবং ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের মধ্যে যারা তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করবে, তাদেরকে নিধন ও নিশ্চিহ্ন করবেন, সর্বত্র ইসলামের একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম হবে। অবশিষ্ট আহলে কিতাবরা ঈসা (আঃ)-এর মৃত্যুর পূর্বেই তাঁর প্রতি যথাযথ ঈমান আনবে। সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, রসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘‘যাঁর হাতে আমার জীবন আছে সেই সত্তার কসম! অবশ্যই এমন এক দিন আসবে, যেদিন তোমাদের মধ্যে ঈসা ইবনে মারয়্যাম একজন ন্যায়পরায়ণ শাসকরূপে অবতরণ করবেন, ক্রুস ভেঙ্গে চুরমার করবেন, শূকর নিধন করবেন, জিযিয়া কর বাতিল করবেন, মাল-সম্পদ এত বেশী হবে যে, (দান বা সাদকা) গ্রহণ করার মত লোক থাকবে না। সেই সময় একটি সিজদাহ্ দুনিয়া এবং তার মধ্যে যা কিছু রয়েছে তার থেকেও উত্তম হবে।’’ (অর্থাৎ, কিয়ামত নিকটে জানার কারণে ইবাদত মানুষের কাছে অতি প্রিয় হবে।) এ হাদীস বর্ণনার পর আবু হুরাইরাহ (রাঃ) বললেন, তোমরা ইচ্ছা করলে, কুরআন কারীমের এ আয়াত পাঠ করতে পার, (وَإِنْ مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلاَّ لَيُؤْمِنََنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِه) অর্থাৎ, আহলে কিতাবদের মধ্যে প্রত্যেকে নিজ মৃত্যুর পূর্বে অবশ্যই তাঁর প্রতি ঈমান আনবে। (বুখারীঃ কিতাবুল আম্বিয়া) এই হাদীস এত অধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তার ফলে তা ‘মুতাওয়াতির’ হাদীসের পর্যায়ভুক্ত। আর এই ‘মুতাওয়াতির’ শুদ্ধ বর্ণনার ভিত্তিতেই আহলে সুন্নাহর সর্বসম্মত আকীদাহ মতে ঈসা (আঃ) আসমানে জীবিত আছেন এবং কিয়ামতের প্রাক্কালে তিনি দুনিয়াতে আসবেন, দাজ্জালকে হত্যা করবেন, সমস্ত ধর্মের অবসান ঘটাবেন, সর্বত্র ইসলামের একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করবেন। ইয়া’জুজ ও মা’জুজ তাঁর সময়েই প্রকাশ হবে এবং তাঁর বদ্দুআর কারণে ইয়া’জুজ ও মা’জুজের ফিতনার অবসান ঘটবে।

[2] এই সাক্ষ্য তাঁর প্রথম জীবন সম্পর্কিত হবে, যেমন আল্লাহ্ সূরা মায়েদায় উল্লেখ করেছেন, {وَكُنتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَّا دُمْتُ فِيهِمْ} অর্থাৎ, যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি ছিলাম তাদের ক্রিয়াকলাপের সাক্ষী। (আয়াত ১১৭)

(তাফসীরে আহসানুল বায়ান)

১৫৯ নং আয়াতের দ্বারা তো কথা একদম পরিষ্কার হয়ে গেলো যে, ঈসা () অবশ্যই ফিরে আসবেন এবং সমস্ত আহলে কিতাবগণ উনার উপর ঈমান আনবে

 

সারমর্ম: উপরোক্ত টি আয়াত থেকে আমরা যা জানতে পারলাম

) ঈসা () কে ইহুদিরা হত্যা করতে পারেনি

) আল্লাহ তায়ালা ঈসা () কে জীবিত অবস্থায় সশরীরে আসমানে উঠিয়ে নিয়েছেন

) শেষ জমানায়, আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি আবার ফিরে আসবেন

) সমস্ত আহলে কিতাবগণ উনার উপরে ঈমান আনবে

শুধু কুরআন দিয়েই প্রমান করে দিলাম, আলহামদুলিল্লাহঅন্যদিকে, অসংখ্য হাদিস তো আছেই

 

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সত্য বুঝার তৌফিক দান করুন আমিন

 

Comments

Popular posts from this blog

হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে নিউক্লিয়ার বোম ড্রামাঃ

সমতলে বিছানো স্থির পৃথিবী। (১ম -৪র্থ খন্ড)। পিডিএফ লিংক। একসাথে।

আর্মি অফ দাজ্জাল (১ম ও ২য়) খন্ডের PDF লিংক একসাথে: